কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী এবং প্রখ্যাত ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ডঃ জিতেন্দ্র সিং বলেন, ভারতে প্রতি তৃতীয়জন ব্যক্তি ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন। ফ্যাটি লিভার রোগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই এই অবস্থা পরিচালনা এবং লিভারকে সুস্থ রাখতে যে ফ্যাটি লিভারের সাথে জড়িত খাবারগুলি খাওয়া এবং এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্দেশিকাটি খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তনগুলি তুলে ধরে যা আপনার লিভারের উপর চাপ কমিয়ে আপনার সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে পারে। আরও বিশদে জানতে এগিয়ে যান।
এই ফ্যাটি লিভার রোগটি কী?
ফ্যাটি লিভার রোগটি হল আপনার লিভার টিস্যুতে ফ্যাট জমা হওয়া। এই অতিরিক্ত ফ্যাট লিভারের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা দেয়। এর ফলে আরও কিছু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ফ্যাটি লিভার রোগ দুই ধরণের হয়:
-
অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ
-
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ (NAFLD)
প্রদত্ত নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, প্রথম ধরণের রোগটি অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণে হয়ে থাকে। আপনি যত বেশি মদ্যপান করবেন, আপনার লিভারের ক্ষতি তত বেশি হবে। ক্রমাগত অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের ফলে, ফ্যাটি লিভারের রোগ লিভারের ক্ষত (সিরোসিস) এমনকি লিভার ফেলুয়ারের মত অবস্থাও ডেকে আনতে পারে।
দ্বিতীয় প্রকার, NAFLD, আবার দুটি প্রকারের।
-
সরল NAFLD:
এটি NAFLD-এর একটি মৃদু রূপ। লিভারে ফ্যাট জমা হয়, কিন্তু লিভারের কোষের কোনও ক্ষতি বা প্রদাহ হয় না। এটি সাধারণত খুব বেশি ক্ষতিকর হয় না এবং আপনি লক্ষণবিহীন জীবনযাপন করতে পারেন। -
নন-অ্যালকোহলিক স্টিটোহেপাটাইটিস (NASH):
এটি NAFLD-এর সবচেয়ে মারাত্মক রূপ। এতে লিভার ফুলে যায় এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়। লিভারে অতিরিক্ত ফ্যাট কোষ জমা হওয়ার কারণে এটি লিভার সিরোসিসের কারণ হতে পারে এবং লিভার ক্যান্সারও হতে পারে। সব ধরণের NAFLD বিভিন্ন কারণে হতে পারে। স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ঝুঁকির কারণগুলির একটি বিস্তারিত তালিকা এখানে দেওয়া হল:
-
ফ্যাট জমার জিনগত প্রবণতা
-
স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন
-
রক্তে উচ্চ শর্করার পরিমাণ
-
প্রিডায়াবেটিক বা ডায়াবেটিক অবস্থা
-
রক্তে ফ্যাটের অত্যধিক মাত্রায় উপস্থিতি
-
উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল
-
ইনসুলিন প্রতিরোধক ক্ষমতা
-
অকার্যকর পিটুইটারি গ্রন্থি
-
অকার্যকর থাইরয়েড গ্রন্থি
-
50 বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা
-
উচ্চ রক্তচাপ
-
অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া
যদিও এই রোগের বেশিরভাগ কারণেরই চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, তবে একটি বিষয় যা আপনি নিজেই মোকাবেলা করতে পারেন – তা হল খাদ্যাভ্যাস। আপনি কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে পারেন যা এই অবস্থাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। পরবর্তী বিভাগে ফ্যাটি লিভারে কিছু খাবার যা এড়িয়ে চলার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
ফ্যাটি লিভারে এমন 8টি খাবার যা এড়িয়ে চলা উচিত
আপনার খাদ্যাভ্যাসে ধীরে ধীরে নেওয়া এবং স্থিতিশীল পরিবর্তনগুলি আপনাকে ফ্যাটি লিভার রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। আপনার খাদ্যাভ্যাস আমূল পরিবর্তন করবেন না, নাহলে আপনি এটি মেনে চলতে পারবেন না। এক টাইমে একটি অস্বাস্থ্যকর জিনিসের পরিবর্তে একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প নিন। ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলার জন্য এখানে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া রইলো।
1. ফুল ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার
দুধ, দই, পনির, পনির ইত্যাদির মতো ফুল ফ্যাটযুক্ত দুগ্ধজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলা উচিত। এর পরিবর্তে, কম ফ্যাটযুক্ত বিকল্পগুলি বেছে নিন।
2. রেড মিট
গরুর মাংস এবং শুয়োরের মাংস সহ রেড মিটে উচ্চ মাত্রার ট্রান্স ফ্যাট থাকে। এমনকি এই মাংস রান্নার পদ্ধতিতেও প্রচুর পরিমাণে তেল/মাখন প্রয়োজন হয়। এতে অস্বাস্থ্যকর খাবারের পরিমাণ আরও বাড়ে। তাই, আপনার খাবার থেকে এগুলো সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া উচিত।
3. তেলে ভাজা খাবার
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার, চিপস, সিঙ্গাড়া ইত্যাদি রান্নার জন্য সাধারণত তেলের প্রয়োজন হয়, যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা এগুলি খাওয়া অস্বাস্থ্যকর করে তোলে। যদি আপনি সত্যিই এগুলোর কোনটি খেতে চান, তাহলে এয়ার-ফ্রায়েড বিকল্পগুলি খুঁজে বের করুন। এগুলোর জন্য খুব কম তেল লাগে, তাই এগুলো তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যকর।
4. চিনিযুক্ত খাবার
সোডা, চকোলেট, মিল্কশেক এবং চিনিযুক্ত মকটেলগুলিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। এর মধ্যে কিছুতে হাই-ফ্রুক্টোজ কর্ন সিরাপও থাকে, যা লিভারের ফ্যাট বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। তাই, যতটা সম্ভব এই খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে, হার্বাল টি, ফলের রস, তরতাজা পুদিনা এবং লেবুর জল ইত্যাদি বেছে নিন।
5. ময়দা
ময়দা দিয়ে তৈরি প্রোডাক্ট, যেমন রুটি, পাস্তা, সিরিয়াল, ভাখরি ইত্যাদি, খুব সহজেই হজম হয়। এগুলিতে রিফাইন কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আপনার খাদ্যতালিকা থেকে এগুলো বাদ দিন এবং গম, জোয়ার, বাজরা এবং ব্রাউন রাইসের মতো হোল গ্রেন শস্য অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনার স্থানীয় বাজারে যদি কুইনোয়া পান তবে আপনি এটি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে এটি ব্যয়বহুল, তাই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শস্যই খাওয়াই ভালো।
6. অতিরিক্ত লবণ সেবন
লবণে সোডিয়াম থাকে। এমনকি কিছু কোম্পানি লবণে অতিরিক্ত সোডিয়াম যোগ করে এবং প্যাকেজিংয়ে এটির বিজ্ঞাপন দেয়। দৈনিক 2,300 মিলিগ্রামের বেশি সোডিয়াম গ্রহণ করা উচিত নয়। তাই, ফ্যাটি লিভার রোগের ক্ষেত্রে নিয়মিত সল্টেড চিপস খাওয়া উচিৎ নয়।
7. প্রক্রিয়াজাত খাবার
ইনস্ট্যান্ট নুডলস, চিপস, ফ্রোজেন পিৎজা এবং খাওয়ার জন্য প্রস্তুত খাবারের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারে প্রায়শই ট্রান্স ফ্যাট, প্রিজারভেটিভ এবং সোডিয়াম বেশি থাকে। এই খাবারগুলি আপনার লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং আপনার শরীরে অপ্রয়োজনীয় রাসায়নিক এবং ক্যালোরি যোগ করবে। তাই, ঘরে তৈরি তাজা খাবার খান।
8. অ্যালকোহল
অ্যালকোহল ঠিক খাবার নয়, কিন্তু যেহেতু এটি ফ্যাটি লিভারের অন্যতম প্রধান কারণ, তাই এটি এই তালিকায় স্থান পাওয়ার যোগ্য। মাঝে মাঝে সীমিত পরিমাণে মদ্যপান গ্রহণযোগ্য। তবে, যারা নিয়মিত মদ্যপান করেন অথবা একবারে অতিরিক্ত মদ্যপান করেন তাদের লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। তাই আপনার মদ্যপান সীমিত করাই শ্রেয়।
Product Recommendations
উপসংহার
আপনার লিভার প্রতিদিন খুব কঠোর পরিশ্রম করে হজমে সাহায্য করে এবং আপনার শরীরকে বিষমুক্ত করে। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে এবং এর যেকোনো ক্ষতি শরীরের সমস্ত কার্যকারিতা ব্যাহত করে। ফ্যাটি লিভার রোগটি একটি খুব গুরুতর অবস্থা। যদি আপনি এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে না চান তবে আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিমিত করুন। তাই, পরেরবার যখন আপনি মিষ্টি সোডা খাওয়ার জন্য আকুল হয়ে ওঠেন, তখন মনে রাখবেন: আপনার লিভারের একটু বিশ্রাম প্রয়োজন। ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে এই খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন এবং আপনার খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলি যোগ করুন।